অফিস থেকে বেরিয়ে

রাস্তা পেরিয়ে আসতেই দেখি

নিরেট অন্ধকারে ঢেকে গেছে চারদিক

লোডশেডিং হলো নাকি।

কাজ শেষে বের হতে

বেশ দেরী হয়ে গেলো বলে

বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি সন্ধ্যার বাসটা

অনেক আগেই গেছে চলে।

পরের বাসের জন্য

অপেক্ষা করতে গিয়ে

বাজলো ঘড়িতে দশটা

মনের মাঝে লাগছিল যেন

কিসের একটা খটকা।

জনহীন অন্ধকারে পথে

হেঁটে চলেছিলাম একা

অমাবস্যার সেই রাতে

ভাবিনি কখনো পাবো তার দেখা।

দুরু দুরু বুকে কি যেন ভেবে

ধরালাম দেশলাইয়ের কাঠি একটা

এমন সময় একটা জীপ এসে

ফেললো হেডলাইটের আলোটা

গাড়িটা এগিয়ে আসছিলো আমারই দিকে

আমি বেশ জোরে ডাকলাম, এই

কোন সাড়াশব্দ নেই

নেই কোন ভ্রুক্ষেপ-

শুধু নিঃশব্দে চললো এগিয়ে

আমিও নিরুপায় হয়ে

উঠলাম গাড়িতে লাফিয়ে।

বললাম ড্রাইভারকে লক্ষ্য করে-

আমায় পান্থপথে নামিয়ে দিন, তাহলেই হবে

বলতে গিয়ে গলার স্বর গেলো উবে

রইলাম চেয়ে-

দেখি গাড়িটাতে কোন ড্রাইভারই নেই।

কে যেন ধরলো চেপে গলার চারধারে

আমি উঠলাম প্রানপনে চিৎকার করে

কিন্তু কোন শব্দ এলোনা বেরিয়ে

গাড়িটা চলতেই থাকলো নিঃশব্দে;

ভাবলাম নেমে পড়ি গাড়ি থেকে

হঠাৎ দেখি একটা ট্রেন আসছে অদূরে

গাড়িটা ছুটে চলেছে সেদিকে।

কোনরকমে গাড়ির দরজা টেনে

ছিটকে পড়লাম বাইরে

তারপর…আর কিছু মনে নেই…

তাকিয়ে দেখি আমি রাস্তায় পড়ে

চশমা পরা একটা লোক বেরিয়ে এলো

গাড়িটার পিছন থেকে

বললো, আমাকে একটু সাহায্য করবেন,

গাড়িটা বিগড়ে গেছে আট মাইল দূরে

সেখান থেকে ঠেলতে ঠেলতে এসেছি এতদূরে

সারা পথে পাইনি একজনকেও

আপনি যদি কষ্ট করে………

 

 

 

  

প্রথম যেদিন গেলাম

মেডিকেলের এনাটমি ডিসেকশন রুমে

মনে মনে ভাবছিলাম

কেন এলাম হেথা- কিসের ভ্রমে।

দেখি টেবিলে রাখা একটা ঘুমন্ত মানুষ-

না, একটা মৃতদেহ

যার অস্থি-মজ্জা সব দৃশ্যমান

নেই শুধু হৃদস্পন্দন।

তারপরেতে শুরু হলো

শরীরতত্ত্ব শিক্ষা

বিরাম নেই একমূহুর্ত

ক্লাস-টিউটোরিয়াল-পরীক্ষা।

মাঝে মাঝে মনে হতো

আমিও বুঝি

নিস্তব্ধ-নিথর মৃতদেহ এক

ঘুরছে দিন রাত একটা চক্রে

আমার অনুভূতিহীন- বোবা বিবেক।

কখনো সেই

মৃতদেহটার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতাম

আমরা আসলে একই ব্যক্তি

দুজনেই মূঢ়-সমস্ত অবয়বে

এক নির্লিপ্ত অভিব্যক্তি

চলেছি একই গন্তব্যে

অহর্নিশি অর্থহীন এই ছুটে চলা

জানিনা শেষ হবে কবে!

 

 (এই কবিতায় শুধু আমি বলতে চেয়েছি আমাদের সব অনুভূতি গুলো কেন ক্রমশঃ হারিয়ে ফেলছি  -কেন আমরা প্রতিদিনের খুব ছোট্ট আনন্দের মূহুর্তগুলোকে উপভোগ করতে পারছিনা

 আমরা সবাই কেবলই সেই পরশপাথর খুঁজে ফিরছি- আমাদের এই অন্তহীন ছুটে চলা কি কোনদিন শেষ হবেনা…???)

 

 

 

  

এক দেশের এক রাজা একবার

পড়লেন দূরারোগ্য রোগে

বললেন, শীঘ্র করো এর প্রতিকার

নইলে কারো রক্ষা নাই আর

রাজ্য মাঝে উঠলো হাহাকার।

মন্ত্রী-পাইক-পেয়াদা সবাই

ছুটলো দিকে দিকে-

রাজ্যের যত ডাক্তার আর কবিরাজকে

আনা হলো রাজগৃহে ঝাঁকে ঝাঁকে।

সবাই বসে চশমা চোখে এঁটে

কেউ নাড়ী টিপে দেখে

কেউবা ছোটে এদিকে সেদিকে।

অবশেষে এলো

বৃদ্ধ এক সন্ন্যাসী রাজগৃহে

বললেন এ রোগ বড় কঠিন,

সারে না কিছুতেই

তবে একটা উপায় আছে

মেলে যদি সুখী মানুষের জামা

তাহলেই রাজা নীরোগ হয়ে

ফিরতে পারেন রাজকার্যে।

খোঁজ খোঁজ পড়ে গেলো চারদিকে

মন্ত্রী-সেপাই-রাজসভাসদ

ঘুরে ঘুরে হয় ক্লান্ত;

সুখী মানুষ কি নেই তবে একজনও

ভেবে ভেবে হয় শ্রান্ত।

কেটে যায় দিনের পর দিন

এ রাজ্য সে রাজ্য ঘুরে

অবশেষে থামলো এসে এক পর্ণকুটিরে-

এই তো সেই সুখী মানুষ

যাকে খুঁজেছে তারা এতদিন ধরে।

দাঁড়ালো গিয়ে তার দ্বারে-

বললো, চাই তোমার একটা জামা, দাও যদি

পাবে অজস্র ধনসম্পদ আর স্বর্নমুদ্রা

রইবে আনন্দে নিরবধি।

লোকটি হেসে বলে,

জামা পাবো কোথা দীনহীন আমি

সুখের অভাব হয়নি কখনো

ধনসম্পদ চাই না আমার

পাতায় ছাওয়া এ কুটির মোর

সোনার চেয়েও দামী।